ভাই ফোঁটা
ভাই ফোঁটা
ভাই বোনের মধুর ও প্রীতির সম্পর্ক বরাবরেই। ভাই বোনের ভালোবাসা এক অন্য ধরনের। তা অন্য কেউ বুঝবে না। ছোটো বেলা থেকেই ভাই বোনের ভালোবাসা গড়ে ওঠে আপনা আপনি থেকেই। এই ভালোবাসা কেউ শিখিয়ে দেয় না। ভাই বোনের মধ্যে নিজে নিজেই গড়ে ওঠে এই ভালোবাসা।
ঝগড়া ঝাটি সব সময় লেগেই থাকে। কারনে অকারণে সময়ে অসময়ে ঝগড়া ঝাটি হবেই। আর মারা মারি স্বাভাবিক ব্যাপার। অল্প একটু কিছুতেই ভাই বোনের মধ্যে মারা মারি লেগেই থাকে। খাওয়া দাওয়া পড়াশুনো বা অন্য কিছু নিয়ে সর্বদা মারা মারি লেগেই থাকে। তবু ভাই বোনের ভালোবাসা অতুলনীয়।
বছরের এই দিনটিতে প্রতি বছর ভাই বোনের মধুর সম্পর্ক পালন করা হয়। যা ভাই ফোঁটা নামে পরিচিত। ভাই ফোঁটা নানা নামে পরিচিত যেমন ভাই দুঁজ, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, ভাইবিজ, ভাইটিকা প্রভৃতি নামে পরিচিত। বিভিন্ন এলাকার স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
একটা মন্ত্র পড়ে ভাই ফোঁটা দেওয়া হয়। এই মন্ত্রটি হলো -
"ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর॥"
এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। ভাইও বোনকে কিছু উপহার বা টাকা দেয়।
হিন্দুদের কাছে ভাই ফোঁটা একটি উৎসব। কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে (কালীপূজার দুই দিন পরে) এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ২য় দিনে উদযাপিত হয়। মাঝেমধ্যে এটি শুক্লপক্ষের ১ম দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে। পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত। সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন। আবার, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত ভাইটিকা নামে। সেখানে বিজয়াদশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবের আরও একটি নাম হল যমদ্বিতীয়া। কথিত আছে, এই দিন মৃত্যুর দেবতা যম তার বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন।
নানা রকম রীতি নীতি অনুসরণ করে আমরা ভাই ফোঁটা পালন করি। সকাল থেকে না খেয়ে থাকে ভাই বোনেরা। বিভিন্ন রকম আচার অনুষ্ঠান করে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়। শ্বেত চন্দন জল দিয়ে ঘসে পেষ্ট করে বোন ভাইকে টিকা প্রদান করেন। আর সাথে ধান দূর্বা ঘাস দিয়ে মঙ্গল কামনা করা হয়। মিষ্টি, পায়েস দিয়ে বোন ভাইকে ফোঁটা দিয়ে থাকেন। প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া হয় পান, সুপুরি, ধান, দূর্বা ঘাস, মিষ্টি, লাড্ডু, লুচি, পয়েস, বড়ি ভাজা ইত্যাদি। আর সাথে শঙ্খ বাজিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে ভাই ফোঁটা দেওয়া হয়। তিন বার ফোঁটা দেওয়া হয়।
বোন ভায়ের মঙ্গল কামনা করে মন্ত্র পড়ে ভাইকে ফোঁটা দিয়ে থাকেন। সাথে দূর্বা ধান দিয়ে আশীর্বাদ করে থাকেন। এবং মিষ্টি মুখ করিয়ে থাকেন। মিষ্টি পায়েস ও অন্যান্য মিষ্টি দিয়ে মিষ্টি মুখ করিয়ে থাকেন।
একে অপরকে ভাই বোনেরা উপহার দিয়ে মঙ্গল কামনা করে থাকেন।
Comments
Post a Comment