বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার হল হকিকত।
বেশ কিছুদিন হলো সোশাল মিডিয়ায় শিক্ষার হাল ফেরানোর জন্য অনেকে নানান রকমের মন্তব্য করেছেন। শিক্ষা এরকম চলতে থাকলে ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত খারাপ হবে, দেশ পিছিয়ে পড়বে, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হবে ইত্যাদি মন্তব্য করেছেন অনেকে।
কিন্তু যখন থেকে ধাপে ধাপে শিক্ষা ব্যবস্থার একমুখী পরিবর্তন হয়ে আসছে তখন তো এরাই সেই শিক্ষা ব্যবস্থার একমুখী পরিবর্তনকে সমর্থন করেছেন পুরোদমে। তাদের কথায় যারা পরিবর্তন করেছেন তারা নাকি সমাজের তাবড় তাবড় ব্যক্তি, বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন উচ্চপদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন বা ছিলেন। তাই সমর্থন করতেই হবে। তারা যা করে ভালোর জন্যেই করেন। একরকম ভাবে সমর্থন করা নিজেদের বোধ বুদ্ধি শিখেই তুলে দেওয়া। আর যারা ঐ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছিল তাদেরকে সমর্থকরা নানা রকম ভাবে হ্যেয় , অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা এমনকি ব্যাঙ্গ পর্যন্ত করে চুপ করানোর চেষ্টা করেছিল।
এখন তাদের বোধ জেগে উঠছে কেন, তা তারা নিজেরাও জানে না, বুঝতেও পারছে না। কারণ তারা ভবিষ্যত চিন্তা করে না, তাদেরকে যা দেখানো হয় তাই দেখে। তাদের মধ্যে অনেকেই চাপ পড়ে পড়াশুনো করেছেন, অনেকের কাছে পড়াশুনো জ্ঞান নয় বোঝা ছিল।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে- যেসব ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশুনায় মনোযোগী , যাদের জ্ঞান অর্জনের আকাঙ্ক্ষা আছে সেসব ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষা লাভ করবেই। তাতে স্কুল কলেজ যদি উঠে যায়, শিক্ষক শিক্ষিকা না থাকে তবু তারা জ্ঞান অর্জন করবেই, পড়াশুনোও করবে।
তাই শুধু মাত্র ভালো ছাত্র ছাত্রীদের কথা ভাবলেই চলবে না, সমগ্র ছাত্র ছাত্রীদের কথা ভাবতে হবে। দেখতে হবে সমাজের সাধারণ মানুষের, পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নতি কিভাবে হবে! যেসব ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজর উপর নির্ভর করে শিক্ষা লাভ করে, তাদের কথা ভেবে তাদেরকে কিভাবে শিক্ষা দেওয়া যায় সে দিকটা লক্ষ্য রাখতে হবে।
সমাজের ট্যাগ লাগানো ব্যক্তিরা যা বলবেন তা সর্বশ্রেণীর উপকারে আসবে তার কোনো মানে নেই। আর সেটা সাধারণ মানুষদের চিন্তা ভাবনা করতে হবে। নিজেদের বোধ বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে হবে। বুদ্ধিজবীদের কথা অন্ধ ভাবে না মেনে সাধারণ যদি একটু ভেবে দেখে যে তাদের (ছেলে মেয়েদের) কেন পড়াশুনো চাপ বলে মনে হতো , বোঝা বলে মনে হতো , তাহলেই বুঝতে পারবে, কি বা কিসের পরিবর্তন করতে হবে ।
কালক্রমে সব কিছুর পরিবর্তন হয় এবং পরিবর্তন করতেও হয়, না হলে পিছিয়ে পড়তে হয় সেটা ঠিক। কিন্তু পরিবর্তন কিভাবে ও কোন কোন দিক দিয়ে করতে হবে সে বিষয়টাও লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণ মানুষদেরও তা বুঝতে হবে। পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার পর যখন দেখল ফল ভালো হচ্ছে না তখন পাস্তায় লাভ কি! ক্ষতি অনেকটাই হয়ে গেছে। আর পুনরায় পরিবর্তন করতে অনেকটা সময় লাগবে। সেই সময়টাতে আরও ক্ষতি হতেই থাকবে।
শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কি কি পরিবর্তন করতে হবে, কোন কোন দিক গুলি পরিবর্তন করা বাঞ্ছনীয়, কোন বিষয় গুলি পরিবর্তন করলে সমগ্র জাতির ও কালের উন্নতি ঘটবে তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
সেই বিষয় গুলি একে একে আলোচনা করা যাক।
* যেকোনো বিষয় বোধগম্য করানোর জন্য শিক্ষক শিক্ষিকা দের অশেষ ভূমিকা রয়েছে। এক এক জন শিক্ষক শিক্ষিকা এক এক বিষয় পড়ান। তাই শিক্ষক শিক্ষিকা দের নিজেদের বিষয়গুলি ছাত্র ছাত্রীদের বোধগম্য করানো সহজ। কিন্তু তা কি আদও হয়! বিষয়টি পড়ে শুনিয়ে দিলেই হয় না বা বিষয়টি তে কি আছে সেটা বলে দিলেই হয় না অথবা প্রশ্ন উত্তর লিখিয়ে দিলেই হয় না। বিষয়টি যাতে ছাত্র ছাত্রীদের বোধগম্য হয় সেভাবে পড়াতে হবে। আর তাই সর্বপ্রথম শিক্ষক শিক্ষিকা দের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিক্ষক শিক্ষিকারা কিভাবে চাকরি পেয়েছেন তা বড়ো কথা নয়। চাকরি পাওয়ার পর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে পড়াচ্ছে কিনা সেটাই বড়ো কথা। অনেকে বলবেন এখানকার শিক্ষক শিক্ষিকারা B.Ed প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। কিন্তু B.Ed প্রশিক্ষণটিও একটি ডিগ্রী। তাই ছাত্র ছাত্রীদের উপযুক্ত করে তোলার জন্য যেভাবে পড়াতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার শিক্ষক শিক্ষিকাদের। আর সেই প্রশিক্ষণ নির্দিষ্ট সময় ধরে দিলে চলবে না। যাকে যতটা সময় দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার তাকে ততটা সময় দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারু একমাসেরও হতে পারে আবার কারু চার বছরও হতে পারে। প্রয়োজন মতো প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আবার শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ছাত্র ছাত্রীরা বিষয়টি খুব ভালো ভাবে বোধগম্য করতে পারে, তেমন ভাবেই পড়াতে হবে।
* এবার আসা যাক পরীক্ষার দিকটি। বিষয়টিতে শুধুমাত্র পাশ ফেল দেখা হয়। তাই পরীক্ষা বিষয়টি তুলে দেওয়া হয়েছে। আসলে পরীক্ষা হলো কে কতটা জ্ঞান অর্জন করল এবং ছাত্র ছাত্রীদের দুর্বল দিকগুলি তুলে ধরা। বিষয়টি ছাত্র ছাত্রীরা কতটা বুঝেছে ও কতটা প্রকাশ করতে পারছে তা দেখার উদ্দেশ্যই হলো পরীক্ষা। তাই পরীক্ষার গুরুত্ব আছে ও থাকবে।
* প্রশ্ন উত্তর কি ধরনের করা উচিৎ! তাও দেখার বিষয়। এখনকার পরীক্ষায় ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্ন উত্তর উঠিয়ে ছোটো ছোটো প্রশ্ন উত্তর করা হয়েছে। কিন্তু ছোটো ছোটো প্রশ্ন উত্তরের যেমন গুরুত্ব রয়েছে সেরকমই ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্ন উত্তরের গুরুত্ব রয়েছে। ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রীরা বিষয়টি কতটা বুঝতে পারল তা বুঝা যায়। এবং নিজের শিক্ষার প্রকাশ করার কৌশল ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে জানা যায়।
সর্বোপরি বলা যায় শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের শিক্ষণের মান বাড়ানোর প্রয়োজন খুব বেশি।
Comments
Post a Comment